মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর। চার যুগ আগের কথা। তখন দেশে সামরিক শাসন। তার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ড স্তিমিত হয়ে পড়ে। এমন সংবাদ জাতি আশা করেনি। তারপরও মৃত্যু চিরসত্য। পরদিন ১৮ নভেম্বর জাতির মুখে শোকাচ্ছন্ন ছবির ওপর ভিত্তি করে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে সেদিনের জনপ্রিয় মুখপাত্র সংবাদ নামক দৈনিকটি।
সম্পাদকীয় -এর শিরোনাম ছিল,‘নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ।’ শতাব্দীর গৌরব রবি আজ অস্তমিত। মজলুম জননেতা আর ইহকালে নেই। মৃত্যুর খবরে জাতি যেন অসহায় হয়ে পড়ে। নব অভ্যুদিত জাতির এক অপূরণীয় ক্ষতি, যা শতাব্দীকাল পরেই অনুভূত হবে। শোক স্তব্ধ দেশবাসীর অন্তরে তার আসন ছিল প্রিয়জনের চেয়েও প্রিয়তর। তার কর্মময় জীবনের অবসান অপ্রত্যাশিত না হলেও আকর্ষিক। নিপীড়িত মানুষের মুকুটহীন সম্রাটের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা চিরস্মরণীয়। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নির্ভীক সেনানী। তার জনকল্যাণের ধারা আর সংগ্রামের চেতনা শুধু বাংলাদেশের সীমানায় আবদ্ধ ছিল না, বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের পক্ষে কণ্ঠ ছিল প্রতিনিয়ত সোচ্চার। তিনি শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থার কথা বলেছেন। বাম রাজনীতিকদের কাছে অনন্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে লাল মওলানা বলে পরিচিতি পান।
শেষ জীবনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাও বাস্তবায়িতও হয়। তার চিন্তা ও কর্মের ব্যাপকতর তথা প্রশস্ততম আয়োজন পরিব্যপ্ত করে উৎসাহিত করেছে। তিনি গভীর অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন। তার সান্নিধ্য সৌম্য স্নেহ দৃষ্টির শাসন আমাদের প্রতিদিনের ক্ষুদ্রতার ঊর্ধ্বে গৌরবের সমাচার বহন করবে না। বেদনা বিধুর জাতির সাথে আমরাও শোকে মুহ্যমান। এই অপরিসীম শোক সহ্য করার শক্তি অর্জন করতে পারি, সেই কামনা করি। সেই সহ্য শক্তি সঞ্চারিত হোক শোক ও বিষাদগ্রস্ত আমাদের জাতীয় জীবনেও।
খুলনা গেজেট/এনএম

